১০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাবিক বললেন, ‘আমাদের জীবন ঝুঁকিতে’

হক বার্তা ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে।

‎কৃষ্ণসাগরে গত ২৮ নভেম্বর একটি তেল পরিবহনকারী জাহাজে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ৪জনসহ ২৫ নাবিক।

হামলার দুই দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি তীরের কাছে আনতে গিয়ে উল্টো এখন জাহাজটিতে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশিসহ ১০ নাবিক। বাংলাদেশি ওই নাবিকের নাম মাহফুজুল ইসলাম।

‎আজ শনিবার হোয়াটসঅ্যাপে ওই নাবিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অচল জাহাজটি তুরস্কের উপকূল ছেড়ে ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে বুলগেরিয়ার জলসীমায় চলে যায়। ড্রোন হামলায় এর ইঞ্জিন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাঁদের উদ্ধারে কেউ সাড়া না দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নাবিকেরা।

Ukraine Ship 1

‎তুরস্কের উপকূলে কৃষ্ণসাগর অতিক্রম করার সময় গত ২৮ নভেম্বর জাহাজটিতে হামলা করেছিল ইউক্রেনের নৌবাহিনী। জাহাজের ২৫ নাবিকের চারজন ছিলেন বাংলাদেশি। জ্বালানি তেলবাহী জাহাজটি রাশিয়ার ‘ছায়া নৌবহরের’ অংশ বলে বিবিসি জানায়।

‎হামলার পর নাবিকদের উদ্ধার করে তুরস্কের কোস্টগার্ড। ইতিমধ্যে জাহাজটিতে থাকা বাংলাদেশের তিনজন নাবিক দেশের উদ্দেশে তুরস্ক থেকে রওনা হয়েছেন। এই তিনজন হলেন কুষ্টিয়ার আল আমিন, ঢাকার ধামরাইয়ের হাবিবুর রহমান এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার আজগর হোসাইন। তবে মাহফুজুল ইসলামসহ মোট ১০ জনকে জাহাজটি নিরাপদে তীরে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর জাহাজটি তীরে আনতে গিয়ে আটকা পড়েন মাহফুজুল ইসলাম।

Ukraine Ship 2

‎অচল জাহাজটি থেকে বাংলাদেশি নাবিক মাহফুজুল ইসলাম হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে জানান, ‘ড্রোন হামলার দুই দিন পর তুরস্কের কোস্টগার্ডের সহায়তায় জাহাজটি টেনে উপকূলের কাছাকাছি আনার জন্য ১০ নাবিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে আমি ছাড়াও চীনের সাতজন, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের একজন করে নাবিক রয়েছেন। এক দিনে ৩০ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করে তীরের কাছাকাছি আনাই ছিল আমাদের কাজ।’

‎মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জাহাজটি উপকূলের কাছে টেনে আনার পর তুরস্কের কোস্টগার্ড চলে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করেও জাহাজটির নোঙর করতে পারিনি। ইঞ্জিন অচল থাকায় নোঙর করা সম্ভব হয়নি। সনাতন পদ্ধতিতেও তা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢেউ ও স্রোতের মুখে অচল জাহাজটি ভাসতে ভাসতে বুলগেরিয়ার জলসীমায় চলে যায়।’

‎মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘বুলগেরিয়ার যাওয়ার পর সেখানকার কোস্টগার্ডকে জানিয়েছি আমরা। সাড়া পাওয়া যায়নি। বাইরে প্রচণ্ড ঠান্ডা। খাবারও নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের জীবন এখন ঝুঁকিতে।’

‎নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন এ ঘটনায় নাবিকদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সংগঠনগলোর সহায়তা চেয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বুলগেরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, যাতে নাবিকদের দ্রুত উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অচল জাহাজটিতে থাকা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে নাবিকদের।’

‎তিনি আরও জানান, নাবিকদের উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে দ্রুতই আমাদের উদ্ধার করা হবে। তবে পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। খাবার ও পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।’

‎অন্যদিকে, বুলগেরিয়ার কোস্টগার্ড জানিয়েছে যে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নাবিকদের নিরাপদে তীরে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে উদ্ধার কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

‎নাবিকদের পরিবারও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মাহফুজুল ইসলামের পরিবারের একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।’

‎এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নাবিকদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

‎তথ্য সহায়তাঃপ্রথমআলো

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাবিক বললেন, ‘আমাদের জীবন ঝুঁকিতে’

আপডেট সময়ঃ ০৬:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

‎কৃষ্ণসাগরে গত ২৮ নভেম্বর একটি তেল পরিবহনকারী জাহাজে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ৪জনসহ ২৫ নাবিক।

হামলার দুই দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি তীরের কাছে আনতে গিয়ে উল্টো এখন জাহাজটিতে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশিসহ ১০ নাবিক। বাংলাদেশি ওই নাবিকের নাম মাহফুজুল ইসলাম।

‎আজ শনিবার হোয়াটসঅ্যাপে ওই নাবিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অচল জাহাজটি তুরস্কের উপকূল ছেড়ে ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে বুলগেরিয়ার জলসীমায় চলে যায়। ড্রোন হামলায় এর ইঞ্জিন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তাঁদের উদ্ধারে কেউ সাড়া না দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন নাবিকেরা।

Ukraine Ship 1

‎তুরস্কের উপকূলে কৃষ্ণসাগর অতিক্রম করার সময় গত ২৮ নভেম্বর জাহাজটিতে হামলা করেছিল ইউক্রেনের নৌবাহিনী। জাহাজের ২৫ নাবিকের চারজন ছিলেন বাংলাদেশি। জ্বালানি তেলবাহী জাহাজটি রাশিয়ার ‘ছায়া নৌবহরের’ অংশ বলে বিবিসি জানায়।

‎হামলার পর নাবিকদের উদ্ধার করে তুরস্কের কোস্টগার্ড। ইতিমধ্যে জাহাজটিতে থাকা বাংলাদেশের তিনজন নাবিক দেশের উদ্দেশে তুরস্ক থেকে রওনা হয়েছেন। এই তিনজন হলেন কুষ্টিয়ার আল আমিন, ঢাকার ধামরাইয়ের হাবিবুর রহমান এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার আজগর হোসাইন। তবে মাহফুজুল ইসলামসহ মোট ১০ জনকে জাহাজটি নিরাপদে তীরে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর জাহাজটি তীরে আনতে গিয়ে আটকা পড়েন মাহফুজুল ইসলাম।

Ukraine Ship 2

‎অচল জাহাজটি থেকে বাংলাদেশি নাবিক মাহফুজুল ইসলাম হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে জানান, ‘ড্রোন হামলার দুই দিন পর তুরস্কের কোস্টগার্ডের সহায়তায় জাহাজটি টেনে উপকূলের কাছাকাছি আনার জন্য ১০ নাবিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে আমি ছাড়াও চীনের সাতজন, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারের একজন করে নাবিক রয়েছেন। এক দিনে ৩০ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করে তীরের কাছাকাছি আনাই ছিল আমাদের কাজ।’

‎মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘জাহাজটি উপকূলের কাছে টেনে আনার পর তুরস্কের কোস্টগার্ড চলে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করেও জাহাজটির নোঙর করতে পারিনি। ইঞ্জিন অচল থাকায় নোঙর করা সম্ভব হয়নি। সনাতন পদ্ধতিতেও তা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢেউ ও স্রোতের মুখে অচল জাহাজটি ভাসতে ভাসতে বুলগেরিয়ার জলসীমায় চলে যায়।’

‎মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘বুলগেরিয়ার যাওয়ার পর সেখানকার কোস্টগার্ডকে জানিয়েছি আমরা। সাড়া পাওয়া যায়নি। বাইরে প্রচণ্ড ঠান্ডা। খাবারও নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের জীবন এখন ঝুঁকিতে।’

‎নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন এ ঘটনায় নাবিকদের উদ্ধারে আন্তর্জাতিক সংগঠনগলোর সহায়তা চেয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বুলগেরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, যাতে নাবিকদের দ্রুত উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অচল জাহাজটিতে থাকা ঝুঁকিতে ফেলতে পারে নাবিকদের।’

‎তিনি আরও জানান, নাবিকদের উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এদিকে, বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছে। মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে দ্রুতই আমাদের উদ্ধার করা হবে। তবে পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। খাবার ও পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।’

‎অন্যদিকে, বুলগেরিয়ার কোস্টগার্ড জানিয়েছে যে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নাবিকদের নিরাপদে তীরে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে উদ্ধার কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

‎নাবিকদের পরিবারও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তারা সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মাহফুজুল ইসলামের পরিবারের একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।’

‎এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নাবিকদের দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

‎তথ্য সহায়তাঃপ্রথমআলো