০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

বালুমহাল, রয়েলটি, চাঁদাবাজি

হক বার্তা ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময়ঃ ১২:০৬:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে।

বালুমহালের অবস্থান জৈন্তাপুরে। গোয়াইনঘাটের কিছু অংশও পেয়েছে। মহালের নাম সারি-১। জৈন্তাপুরের সারি নদীর নামে মহালের নাম। কিন্তু আদতে সারি-১ মহালে এখন বালু উত্তোলন হচ্ছে না। এ কারণে জাফলং জুড়ে লুটপাট করা বালুর বৈধতা দেয়া হচ্ছে ওই বালুমহালের রিসিটে। আর সেটি নেয়া হচ্ছে সরকার ঘোষিত মহাল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত দেড় মাসে জাফলং থেকে অন্তত ৭-৮ কোটি টাকার বালু লুট করা হয়েছে। এই বালু লুট নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মামলাও হয়েছে পাল্টাপাল্টি। উপদেষ্টার গাড়ি বহরও আটকে দেয়ার চেষ্টা করে বালুখেকোরা। এরপর থেকে জাফলংয়ের পরিস্থিতি শান্ত। বর্তমানে উত্তেজনা গোয়াইনঘাটে। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গোয়াইনঘাট সদরের তিতারাইয়ের কালা মিয়ার ঘাট। এই ঘাটই হচ্ছে চাঁদাবাজির হেডকোয়ার্টার। যে স্থান থেকে বালুবাহী ভলগেট ও নৌকা থেকে টাকা তোলা হচ্ছে সেখানে কোনো বালুমহালের অস্তিত্ব নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই বালুখেকোরা এই কাজ করছে। রয়্যালিটিও নিচ্ছে মনগড়া। তারা জানান, গতবার এই স্থানে চাঁদাবাজি হয়েছে। তবে, ওই সময় ফুটপ্রতি রয়্যালিটি নেয়া হয়েছে দেড় টাকা। আর এবার ঈদের আগে নেয়া হয়েছে ৩ টাকা করে। ঈদের পর থেকে নেয়া হচ্ছে ৪ টাকা হারে। একে তো রয়্যালিটির নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে অন্যদিকে রেইটও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

পিয়াইন নদীর কালা মিয়ার ঘাট। জাফলংয়ের প্রবেশমুখ। পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা- ইসিএ’র আওতাভুক্ত হওয়ার কারণে জাফলংয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু জাফলংয়ে বালু লুট হচ্ছেই। এমনকি জিরো পয়েন্ট থেকে রাতের আঁধারে পাথর লুট করা হচ্ছে। আর লুটপাট করা সব বালু ও পাথর আসে কালা মিয়ার ঘাটে। সেখানে তারা চাঁদাবাজি করে। নিজেরা তো সারি-১ এর নামে চাঁদাবাজি করে, তার উপর পুলিশের নাম ভাঙিয়ে প্রতিটি ভলগেট থেকে ৭ হাজার টাকা করে বালুখেকোরা চাঁদা আদায় করছে। অথচ এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ। পুলিশের নামে কোনো টাকা তোলা হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি। ওসি’র ভাষ্যের ঠিক উল্টো কর্মকাণ্ড করছেন মাঠপর্যায়ের সাব-ইন্সপেক্টররা। তারাই পুলিশের নামে টাকা তুলে লুটে নিচ্ছে। এ কারণে ২৫শে মে যখন চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাটের বাংলাবাজারে প্রতিরোধ গড়েছিলেন স্থানীয় মেম্বার রিয়াজ উদ্দিন তালুকদারের লোকজন, তখন গোয়াইনঘাট থানার এসআই উৎসবের উপস্থিতিতে সেখানে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। সারি-১ এর ইজারাদার অংশের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বাংলাবাজারে গিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার।

ঘটনার এক মাস পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ মামলা নিয়েছে। রিয়াজ জানান, এ ঘটনায় সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি ঘটনা সারিয়ে কাউন্টার মামলা করা হয়েছে। সে মামলায় গুরুতর আহতদেরও আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন- পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্টার মামলা দিয়ে তারা চাঁদাবাজির পথ পরিষ্কার করতে চাইছে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন নদীতে আর কোনো চাঁদাবাজি চায় না। এজন্য মানুষ ক্ষুব্ধ রয়েছে। এদিকে জাফলং এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, দুই উপদেষ্টার গাড়ি পথরোধের ঘটনায় গোয়াইনঘাটের চিহ্নিত চাঁদাবাজরা পুলিশের মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছে। তারা এখন আর জাফলংয়ে নেই। কেউ ঢাকায়, কেউবা সিলেটে অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এজাহারভুক্ত একজন আসামি ছাড়া আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। গ্রেপ্তারেও পুলিশের আগ্রহ নেই। এই অবস্থায় বাংলাবাজারের বাধা সত্ত্ব্বেও পুলিশের শেল্টারে রাতের আঁধারে নৌকা তোলার চেষ্টা চলছে। জাফলংয়ের বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লুটপাটের কারণে গত দুই মাসে জাফলংয়ে পরপর দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। চায়ের বাগান ধ্বংস করা হচ্ছে। উপদেষ্টারা জাফলং সফরকালে বালু লুট বন্ধের যে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সেটিও জাফলংয়ে উপেক্ষিত হচ্ছে বলে জানান তারা।

 

 

সুত্র: মানবজমিন

ট্যাগসঃ

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

বালুমহাল, রয়েলটি, চাঁদাবাজি

আপডেট সময়ঃ ১২:০৬:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

বালুমহালের অবস্থান জৈন্তাপুরে। গোয়াইনঘাটের কিছু অংশও পেয়েছে। মহালের নাম সারি-১। জৈন্তাপুরের সারি নদীর নামে মহালের নাম। কিন্তু আদতে সারি-১ মহালে এখন বালু উত্তোলন হচ্ছে না। এ কারণে জাফলং জুড়ে লুটপাট করা বালুর বৈধতা দেয়া হচ্ছে ওই বালুমহালের রিসিটে। আর সেটি নেয়া হচ্ছে সরকার ঘোষিত মহাল থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত দেড় মাসে জাফলং থেকে অন্তত ৭-৮ কোটি টাকার বালু লুট করা হয়েছে। এই বালু লুট নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। মামলাও হয়েছে পাল্টাপাল্টি। উপদেষ্টার গাড়ি বহরও আটকে দেয়ার চেষ্টা করে বালুখেকোরা। এরপর থেকে জাফলংয়ের পরিস্থিতি শান্ত। বর্তমানে উত্তেজনা গোয়াইনঘাটে। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গোয়াইনঘাট সদরের তিতারাইয়ের কালা মিয়ার ঘাট। এই ঘাটই হচ্ছে চাঁদাবাজির হেডকোয়ার্টার। যে স্থান থেকে বালুবাহী ভলগেট ও নৌকা থেকে টাকা তোলা হচ্ছে সেখানে কোনো বালুমহালের অস্তিত্ব নেই। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই বালুখেকোরা এই কাজ করছে। রয়্যালিটিও নিচ্ছে মনগড়া। তারা জানান, গতবার এই স্থানে চাঁদাবাজি হয়েছে। তবে, ওই সময় ফুটপ্রতি রয়্যালিটি নেয়া হয়েছে দেড় টাকা। আর এবার ঈদের আগে নেয়া হয়েছে ৩ টাকা করে। ঈদের পর থেকে নেয়া হচ্ছে ৪ টাকা হারে। একে তো রয়্যালিটির নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে অন্যদিকে রেইটও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

পিয়াইন নদীর কালা মিয়ার ঘাট। জাফলংয়ের প্রবেশমুখ। পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা- ইসিএ’র আওতাভুক্ত হওয়ার কারণে জাফলংয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু জাফলংয়ে বালু লুট হচ্ছেই। এমনকি জিরো পয়েন্ট থেকে রাতের আঁধারে পাথর লুট করা হচ্ছে। আর লুটপাট করা সব বালু ও পাথর আসে কালা মিয়ার ঘাটে। সেখানে তারা চাঁদাবাজি করে। নিজেরা তো সারি-১ এর নামে চাঁদাবাজি করে, তার উপর পুলিশের নাম ভাঙিয়ে প্রতিটি ভলগেট থেকে ৭ হাজার টাকা করে বালুখেকোরা চাঁদা আদায় করছে। অথচ এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ। পুলিশের নামে কোনো টাকা তোলা হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি। ওসি’র ভাষ্যের ঠিক উল্টো কর্মকাণ্ড করছেন মাঠপর্যায়ের সাব-ইন্সপেক্টররা। তারাই পুলিশের নামে টাকা তুলে লুটে নিচ্ছে। এ কারণে ২৫শে মে যখন চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাটের বাংলাবাজারে প্রতিরোধ গড়েছিলেন স্থানীয় মেম্বার রিয়াজ উদ্দিন তালুকদারের লোকজন, তখন গোয়াইনঘাট থানার এসআই উৎসবের উপস্থিতিতে সেখানে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। সারি-১ এর ইজারাদার অংশের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বাংলাবাজারে গিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার।

ঘটনার এক মাস পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ মামলা নিয়েছে। রিয়াজ জানান, এ ঘটনায় সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি ঘটনা সারিয়ে কাউন্টার মামলা করা হয়েছে। সে মামলায় গুরুতর আহতদেরও আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন- পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্টার মামলা দিয়ে তারা চাঁদাবাজির পথ পরিষ্কার করতে চাইছে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন নদীতে আর কোনো চাঁদাবাজি চায় না। এজন্য মানুষ ক্ষুব্ধ রয়েছে। এদিকে জাফলং এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, দুই উপদেষ্টার গাড়ি পথরোধের ঘটনায় গোয়াইনঘাটের চিহ্নিত চাঁদাবাজরা পুলিশের মামলার আসামি হয়ে পলাতক রয়েছে। তারা এখন আর জাফলংয়ে নেই। কেউ ঢাকায়, কেউবা সিলেটে অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ এজাহারভুক্ত একজন আসামি ছাড়া আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। গ্রেপ্তারেও পুলিশের আগ্রহ নেই। এই অবস্থায় বাংলাবাজারের বাধা সত্ত্ব্বেও পুলিশের শেল্টারে রাতের আঁধারে নৌকা তোলার চেষ্টা চলছে। জাফলংয়ের বালু ও পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লুটপাটের কারণে গত দুই মাসে জাফলংয়ে পরপর দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। চায়ের বাগান ধ্বংস করা হচ্ছে। উপদেষ্টারা জাফলং সফরকালে বালু লুট বন্ধের যে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সেটিও জাফলংয়ে উপেক্ষিত হচ্ছে বলে জানান তারা।

 

 

সুত্র: মানবজমিন