১০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বড় দুঃসংবাদ

হক বার্তা ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময়ঃ ১০:৩১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৬ বার পড়া হয়েছে।

‎যুক্তরাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া স্থগিত বা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভিসা পদ্ধতির অপব্যবহার বৃদ্ধি এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর অভিবাসন নিয়মের চাপ বৃদ্ধির কারণে কমপক্ষে নয়টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ‘উচ্চ ঝুঁকি’ যুক্ত দেশগুলো থেকে শিক্ষার্থী নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

‎বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ইগল সতর্ক করে বলেছেন, ভিসা পদ্ধতিকে ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার চোরাগোপ্তা পথ হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।

‎ব্রিটিশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি আপাতত স্থগিত বা সীমিত করেছে। এদের মধ্যে চেস্টার ইউনিভার্সিটি পাকিস্তান থেকে ২০২৬ সালের শরৎকাল পর্যন্ত ছাত্র নেওয়া স্থগিত করেছে, কারণ তারা ভিসা প্রত্যাখ্যানের ‘সাম্প্রতিক ও অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছে।

‎বাংলাদেশ থেকে স্নাতক স্তরে কোনো আবেদন গ্রহণ করছে না। ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটি পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত রেখেছে।

‎এ ছাড়া, সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটিও একই কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। অন্যদিকে, অক্সফোর্ড ব্রুকস আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া স্নাতক কোর্সগুলোর জন্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তি আপাতত বন্ধ রেখেছে এবং লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি নিশ্চিত করেছে যে তাদের ভিসা বাতিলের ৬০ শতাংশের জন্য বাংলাদেশ দায়ী হওয়ায় তারা ওই দেশটি থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে। প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিপিপি ইউনিভার্সিটিও ‘ঝুঁকি প্রশমন’ কৌশল হিসেবে পাকিস্তান থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে।

‎চলতি বছরের প্রথম দিকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভিসা স্পনসর লাইসেন্স ধরে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য তিনটি ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট’—এর মাপকাঠি পরিবর্তন করে। অভিবাসন নিয়মের অপব্যবহার থামানো ও মোট অভিবাসন কমানোর উদ্দেশ্যে এই পরিবর্তন আনা হয়।

‎গত সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া নতুন নিয়ম অনুসারে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের বদলে এখন থেকে ৫ শতাংশের বেশি প্রত্যাখ্যান দেখতে পারবে না।

‎উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী এক বছরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের (নির্ভরশীলদের বাদ দিয়ে) ভিসা বাতিলের গড় হার ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ২২ শতাংশ, যা নতুন সরকারি সীমার চেয়ে অনেক বেশি। বাতিল হওয়া মোট আবেদনের অর্ধেকের বেশিই এই দুটি দেশের।

‎পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যাও বেড়েছে, যাদের বেশির ভাগই কর্ম বা পড়াশোনার ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে গিয়েছিলেন।

‎এদিকে লাহোরভিত্তিক শিক্ষা সংস্থা অ্যাডভান্স অ্যাডভাইজরসের প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেছেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আবেদন বাতিল হওয়ায় প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়ছেন, যা খুবই দুঃখের। তিনি যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে জাল আবেদন তৈরির সুযোগ তৈরি করার অভিযোগ তুলেছেন এবং তাদের বিদেশি এজেন্টদের আরও ভালোভাবে যাচাই করার অনুরোধ করেছেন।

‎এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ তারা উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। অনেক শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার এই সিদ্ধান্তের কারণে হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন যে এই ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের শিক্ষা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

‎বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের কঠোর নীতি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বিকল্প খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন অন্যান্য দেশের দিকে নজর দিচ্ছেন যেখানে ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ ভালো।

‎এছাড়া, শিক্ষার্থীরা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও তাদের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য এই সময়ে মানসিক সমর্থন এবং সঠিক পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যাতে তারা তাদের শিক্ষা যাত্রায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

‎অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারে, যেমন ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা এবং প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা। এতে করে তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।

‎তথ্যসহায়তাঃআরটিভিঅনলাইন

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

যুক্তরাজ্যের স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বড় দুঃসংবাদ

আপডেট সময়ঃ ১০:৩১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫

‎যুক্তরাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেওয়া স্থগিত বা সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভিসা পদ্ধতির অপব্যবহার বৃদ্ধি এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর অভিবাসন নিয়মের চাপ বৃদ্ধির কারণে কমপক্ষে নয়টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ‘উচ্চ ঝুঁকি’ যুক্ত দেশগুলো থেকে শিক্ষার্থী নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

‎বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ইগল সতর্ক করে বলেছেন, ভিসা পদ্ধতিকে ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার চোরাগোপ্তা পথ হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।

‎ব্রিটিশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি আপাতত স্থগিত বা সীমিত করেছে। এদের মধ্যে চেস্টার ইউনিভার্সিটি পাকিস্তান থেকে ২০২৬ সালের শরৎকাল পর্যন্ত ছাত্র নেওয়া স্থগিত করেছে, কারণ তারা ভিসা প্রত্যাখ্যানের ‘সাম্প্রতিক ও অপ্রত্যাশিত বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছে।

‎বাংলাদেশ থেকে স্নাতক স্তরে কোনো আবেদন গ্রহণ করছে না। ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটি পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত রেখেছে।

‎এ ছাড়া, সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটিও একই কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। অন্যদিকে, অক্সফোর্ড ব্রুকস আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া স্নাতক কোর্সগুলোর জন্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তি আপাতত বন্ধ রেখেছে এবং লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি নিশ্চিত করেছে যে তাদের ভিসা বাতিলের ৬০ শতাংশের জন্য বাংলাদেশ দায়ী হওয়ায় তারা ওই দেশটি থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে। প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিপিপি ইউনিভার্সিটিও ‘ঝুঁকি প্রশমন’ কৌশল হিসেবে পাকিস্তান থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে।

‎চলতি বছরের প্রথম দিকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভিসা স্পনসর লাইসেন্স ধরে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য তিনটি ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট’—এর মাপকাঠি পরিবর্তন করে। অভিবাসন নিয়মের অপব্যবহার থামানো ও মোট অভিবাসন কমানোর উদ্দেশ্যে এই পরিবর্তন আনা হয়।

‎গত সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া নতুন নিয়ম অনুসারে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের বদলে এখন থেকে ৫ শতাংশের বেশি প্রত্যাখ্যান দেখতে পারবে না।

‎উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী এক বছরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের (নির্ভরশীলদের বাদ দিয়ে) ভিসা বাতিলের গড় হার ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ২২ শতাংশ, যা নতুন সরকারি সীমার চেয়ে অনেক বেশি। বাতিল হওয়া মোট আবেদনের অর্ধেকের বেশিই এই দুটি দেশের।

‎পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের আশ্রয় আবেদনের সংখ্যাও বেড়েছে, যাদের বেশির ভাগই কর্ম বা পড়াশোনার ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে গিয়েছিলেন।

‎এদিকে লাহোরভিত্তিক শিক্ষা সংস্থা অ্যাডভান্স অ্যাডভাইজরসের প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেছেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আবেদন বাতিল হওয়ায় প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়ছেন, যা খুবই দুঃখের। তিনি যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে জাল আবেদন তৈরির সুযোগ তৈরি করার অভিযোগ তুলেছেন এবং তাদের বিদেশি এজেন্টদের আরও ভালোভাবে যাচাই করার অনুরোধ করেছেন।

‎এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ তারা উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। অনেক শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার এই সিদ্ধান্তের কারণে হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন যে এই ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের শিক্ষা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

‎বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের কঠোর নীতি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বিকল্প খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন অন্যান্য দেশের দিকে নজর দিচ্ছেন যেখানে ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং উচ্চশিক্ষার সুযোগ ভালো।

‎এছাড়া, শিক্ষার্থীরা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও তাদের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য এই সময়ে মানসিক সমর্থন এবং সঠিক পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যাতে তারা তাদের শিক্ষা যাত্রায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

‎অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারে, যেমন ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা এবং প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা। এতে করে তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।

‎তথ্যসহায়তাঃআরটিভিঅনলাইন