১১:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

সদর হাসপাতালের আউটসোর্সিং এর টেন্ডার মেয়াদ ১ মাস , প্রতি পদের দাম ৮০-৮৫ হাজার টাকা!

স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট সময়ঃ ১১:০৭:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে।

‎সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ ঘিরে উঠেছে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। মাত্র ১ মাস মেয়াদে একটি টেন্ডার আহ্বান করে, সেখানে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। 

‎অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের আশ্বাসেই প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রতি পদে ৮০-৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হচ্ছে।

‎টেন্ডার সময়সীমা মাত্র ১ মাস, কিন্তু নিয়োগ অস্থায়ী !

‎হাসপাতালের নথি অনুসারে, আউট সোর্সিংয়ের নিয়োগের জন্য আহ্বান করা টেন্ডারের মেয়াদ মাত্র ১ মাস। কিন্তু সেই সীমিত সময়ের মাঝেই বেশ কয়েকজনকে চুক্তিভিত্তিক কাজে যুক্ত করা হয়েছে। এমনকি নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রত্যাশা করছেন, “পরিচালক মহোদয়ের আশ্বাস অনুযায়ী” এই মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এখানেই উঠছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—টেন্ডার চুক্তি স্বল্পমেয়াদি হলে কীভাবে দেওয়া হচ্ছে স্থায়ী ভিশন আর নিয়োগ? নিয়োগ প্রাপ্ত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কে ৮ মাসের মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়, অনেকে চাকুরির ভয়ে কিছু বলতে রাজি হন নি।

‎আউটসোর্সিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছে রাজধানী ভিত্তিক ‘গাউছিয়া’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন সুনামগঞ্জের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা।

‎স্থানীয়ভাবে গাউছিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন সুনামগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান, জেলা যুবদলের নেতা দাবি করা সফিকুল ইসলাম এবং বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন।

‎চাকরি পেতে হলে ‘রুমন-সহিদ’ এর রেফারেন্স থাকতে হবে ! শহরের শিল্পকলার পাশে জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসে নিয়োগ চলাকালীন সময় অনেক পার্থীকে তারা এসব কথা বলে ইন্টারভিউ রুমে ঢুকতে দেন নি।

‎চাকরি প্রত্যাশী কয়েকজনের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ইতোমধ্যেই আমাদের হাতে এসেছে। একাধিক রেকর্ডে যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া সফিকুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়,

‎”৮৫ হাজার টাকা লাগবে। এর নিচে কিছু হবে না। এটা উপরে দিতে হয়।”

‎আরেকটি কল রেকর্ডে তিনি বলেন,

‎”রুমন আর সহিদ ছাড়া কেউ সিভি দিবেন না। আমি কিছু করতে পারবো না।”

‎উল্লেখ্য, রুমন ও সহিদ—উভয়েই সদর হাসপাতালে ঝাড়ুদার।

‎ঘুষের অভিযোগ: প্রতি পদে ৮০–৮৫ হাজার টাকা!

‎হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আউটসোর্সিংয়ের নামে বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেতে হলে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

‎নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী বলেন—

‎“আমাদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে—৮৫ হাজার টাকা দিলে চাকরি হবে, পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়বে। পরিচালক সাহেব নাকি আশ্বস্ত করছেন, তাই আমরা সাহস করে দিচ্ছি।”

‎এই অর্থ সরাসরি ঠিকাদার কিংবা হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাত ঘুরে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

‎পরিচালকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন :

‎হাসপাতালের পরিচালক মো: মাহবুবুর রহমান প্রার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডার মেয়াদ বাড়বে, চিন্তার কিছু নেই। এই আশ্বাসকেই ঘিরে এখন শুরু হয়েছে দুর্নীতির খেলা।

‎বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার এমন আশ্বাস দেওয়া আইন ও প্রশাসনিক নিয়মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এতে আউটসোর্সিংয়ের স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা দুটিই নষ্ট হচ্ছে।

‎চিকিৎসা সেবায় প্রভাব ফেলছে এই অনিয়ম:

‎এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে জনবল এলেও সেই কর্মীদের অধিকাংশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাদের বাছাই হচ্ছে দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা দেখে নয়, কে কত টাকা দিতে পারবে তা দিয়েই।

‎একজন সিনিয়র নার্স অভিযোগ করেন—

‎ “নতুন আসা লোকগুলোর হাতে কোনো ট্রেনিং নেই, অনেকেই হাসপাতালের পরিবেশ বোঝে না। এতে রোগীসেবায় গলদ দেখা দিচ্ছে।”

‎এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। একটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এমন নগ্ন বাণিজ্য চলতে পারে—এমনটি বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ।

‎সুনামগঞ্জের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটিতে যদি আউটসোর্সিং নিয়োগেই চলে ঘুষ বাণিজ্য, তাহলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কাদের হাতে?

‎প্রশ্ন উঠেছে—এই ১ মাসের টেন্ডারের পেছনে কারা? কাদের ছত্রছায়ায় চলে এমন লেনদেন?

‎দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠেছে স্থানীয় সচেতন মহল থেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

সদর হাসপাতালের আউটসোর্সিং এর টেন্ডার মেয়াদ ১ মাস , প্রতি পদের দাম ৮০-৮৫ হাজার টাকা!

আপডেট সময়ঃ ১১:০৭:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

‎সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ ঘিরে উঠেছে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। মাত্র ১ মাস মেয়াদে একটি টেন্ডার আহ্বান করে, সেখানে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। 

‎অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের পরিচালক মহোদয়ের আশ্বাসেই প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রতি পদে ৮০-৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করা হচ্ছে।

‎টেন্ডার সময়সীমা মাত্র ১ মাস, কিন্তু নিয়োগ অস্থায়ী !

‎হাসপাতালের নথি অনুসারে, আউট সোর্সিংয়ের নিয়োগের জন্য আহ্বান করা টেন্ডারের মেয়াদ মাত্র ১ মাস। কিন্তু সেই সীমিত সময়ের মাঝেই বেশ কয়েকজনকে চুক্তিভিত্তিক কাজে যুক্ত করা হয়েছে। এমনকি নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রত্যাশা করছেন, “পরিচালক মহোদয়ের আশ্বাস অনুযায়ী” এই মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এখানেই উঠছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—টেন্ডার চুক্তি স্বল্পমেয়াদি হলে কীভাবে দেওয়া হচ্ছে স্থায়ী ভিশন আর নিয়োগ? নিয়োগ প্রাপ্ত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কে ৮ মাসের মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়, অনেকে চাকুরির ভয়ে কিছু বলতে রাজি হন নি।

‎আউটসোর্সিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছে রাজধানী ভিত্তিক ‘গাউছিয়া’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন সুনামগঞ্জের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা।

‎স্থানীয়ভাবে গাউছিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন সুনামগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান, জেলা যুবদলের নেতা দাবি করা সফিকুল ইসলাম এবং বিএনপি নেতা মোশাররফ হোসেন।

‎চাকরি পেতে হলে ‘রুমন-সহিদ’ এর রেফারেন্স থাকতে হবে ! শহরের শিল্পকলার পাশে জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসে নিয়োগ চলাকালীন সময় অনেক পার্থীকে তারা এসব কথা বলে ইন্টারভিউ রুমে ঢুকতে দেন নি।

‎চাকরি প্রত্যাশী কয়েকজনের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ইতোমধ্যেই আমাদের হাতে এসেছে। একাধিক রেকর্ডে যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া সফিকুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়,

‎”৮৫ হাজার টাকা লাগবে। এর নিচে কিছু হবে না। এটা উপরে দিতে হয়।”

‎আরেকটি কল রেকর্ডে তিনি বলেন,

‎”রুমন আর সহিদ ছাড়া কেউ সিভি দিবেন না। আমি কিছু করতে পারবো না।”

‎উল্লেখ্য, রুমন ও সহিদ—উভয়েই সদর হাসপাতালে ঝাড়ুদার।

‎ঘুষের অভিযোগ: প্রতি পদে ৮০–৮৫ হাজার টাকা!

‎হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আউটসোর্সিংয়ের নামে বিভিন্ন পদে নিয়োগ পেতে হলে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।

‎নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী বলেন—

‎“আমাদের স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে—৮৫ হাজার টাকা দিলে চাকরি হবে, পরবর্তীতে মেয়াদ বাড়বে। পরিচালক সাহেব নাকি আশ্বস্ত করছেন, তাই আমরা সাহস করে দিচ্ছি।”

‎এই অর্থ সরাসরি ঠিকাদার কিংবা হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাত ঘুরে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

‎পরিচালকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন :

‎হাসপাতালের পরিচালক মো: মাহবুবুর রহমান প্রার্থীদের আশ্বস্ত করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টেন্ডার মেয়াদ বাড়বে, চিন্তার কিছু নেই। এই আশ্বাসকেই ঘিরে এখন শুরু হয়েছে দুর্নীতির খেলা।

‎বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার এমন আশ্বাস দেওয়া আইন ও প্রশাসনিক নিয়মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এতে আউটসোর্সিংয়ের স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা দুটিই নষ্ট হচ্ছে।

‎চিকিৎসা সেবায় প্রভাব ফেলছে এই অনিয়ম:

‎এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে হাসপাতালে জনবল এলেও সেই কর্মীদের অধিকাংশের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাদের বাছাই হচ্ছে দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা দেখে নয়, কে কত টাকা দিতে পারবে তা দিয়েই।

‎একজন সিনিয়র নার্স অভিযোগ করেন—

‎ “নতুন আসা লোকগুলোর হাতে কোনো ট্রেনিং নেই, অনেকেই হাসপাতালের পরিবেশ বোঝে না। এতে রোগীসেবায় গলদ দেখা দিচ্ছে।”

‎এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। একটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এমন নগ্ন বাণিজ্য চলতে পারে—এমনটি বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউ।

‎সুনামগঞ্জের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটিতে যদি আউটসোর্সিং নিয়োগেই চলে ঘুষ বাণিজ্য, তাহলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কাদের হাতে?

‎প্রশ্ন উঠেছে—এই ১ মাসের টেন্ডারের পেছনে কারা? কাদের ছত্রছায়ায় চলে এমন লেনদেন?

‎দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠেছে স্থানীয় সচেতন মহল থেকে।