১০:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

এয়ার টিকিট বিক্রির নামে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরুঃ হুন্ডি চক্রের হোতা আসফিয়া জান্নাত সালেহ

হক বার্তা ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে।

‎বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও দেশে এয়ার টিকিট সংক্রান্ত অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি থামছে না। এবার নতুন ধরনের পদ্ধতিতে এয়ার টিকিট বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে সায়মন ওভারসীজ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

‎বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, ক্রস বর্ডারে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

‎বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং ট্রাভেল এজেন্ট খাতের একাধিক সূত্র জানায়, সায়মন ওভারসীজ ঢাকায় নিবন্ধিত নিজের প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) আইডি বিদেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির কাছে ব্যবহার করতে দিয়েছে। সেই আইডি দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশে টিকিট বিক্রি করা হয়। কিন্তু এভাবে বিক্রিত টিকিটের অর্থ বৈধ পথে দেশে ফেরত আসেনি। প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পিতভাবে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‎তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছে মন্ত্রণালয়

‎মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সায়মন ওভারসীজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহ–এর কাছে ক্রস বর্ডারে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত সোমবার পাঠানো সেই চিঠিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত উত্তর দিতে বলা হয়েছে।

 

‎আসফিয়া জান্নাত সালেহের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত সায়মন ওভারসীজ বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)–এর জিডিএস আইডি ব্যবহার করে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মোট ১,৮৯৪টি এয়ার টিকিট বিক্রি করেছে। এসব টিকিটের আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ১৬ কোটি টাকা। যাত্রীরা ওই দেশগুলো থেকেই মূল্য পরিশোধ করলেও সেই টাকা বাংলাদেশে ফেরত আসেনি বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

‎ট্রাভেল এজেন্টদের মতে, এভাবেই অর্থ পাচার হয়েছে

‎ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত ট্রাভেল এজেন্টদের নিজস্ব জিডিএস আইডি থাকে, যা বাংলাদেশ থেকেই পরিচালনা করতে হয়। এই আইডির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হলে আইএটিএর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকে অর্থ প্রদান করতে হয়, এবং সেই অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশের রিজার্ভে যুক্ত হয়ে থাকে।

‎কিন্তু সায়মন ওভারসীজ নিজের জিডিএস আইডি বিদেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কাছে ব্যবহার করতে দেয়। ফলে টিকিট বিদেশে বিক্রি হলেও টাকার প্রবাহ বাংলাদেশে ফিরে আসেনি। এই পদ্ধতিতেই প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পাচারে জড়িয়ে পড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।

‎আসফিয়া জান্নাতের বিরুদ্ধে অতীতে অনিয়মের অভিযোগ

‎তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রাভেল এজেন্টদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)–এর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আসফিয়া জান্নাত সালেহ। সেই পদ ব্যবহার করে তিনি নানামুখী অনিয়মে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের আগস্টে আটাব কমিটি বাতিল করে মন্ত্রণালয়। কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর থেকেই আসফিয়া জান্নাতের বিরুদ্ধে এয়ার টিকিট কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ সামনে আসে।

‎তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়, সায়মন ওভারসীজ লিমিটেডের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দ্রুততার সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাবের নতুন নেতৃত্ব এই ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

‎বিমান পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের কেলেঙ্কারি রোধে প্রযুক্তিগত নজরদারি এবং নিয়মিত অডিট অত্যন্ত জরুরি। তারা পরামর্শ দেন যে, আন্তর্জাতিক মানের একটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত, যা এ ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

‎এদিকে, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সায়মন ওভারসীজ লিমিটেডের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সহযোগিতা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।

 

 

 

 

‎তথ্যসহায়তাঃযায়যায়দিন

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

এয়ার টিকিট বিক্রির নামে অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরুঃ হুন্ডি চক্রের হোতা আসফিয়া জান্নাত সালেহ

আপডেট সময়ঃ ০৮:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

‎বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও দেশে এয়ার টিকিট সংক্রান্ত অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি থামছে না। এবার নতুন ধরনের পদ্ধতিতে এয়ার টিকিট বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে সায়মন ওভারসীজ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

‎বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, ক্রস বর্ডারে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

‎বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং ট্রাভেল এজেন্ট খাতের একাধিক সূত্র জানায়, সায়মন ওভারসীজ ঢাকায় নিবন্ধিত নিজের প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) আইডি বিদেশের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির কাছে ব্যবহার করতে দিয়েছে। সেই আইডি দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদেশে টিকিট বিক্রি করা হয়। কিন্তু এভাবে বিক্রিত টিকিটের অর্থ বৈধ পথে দেশে ফেরত আসেনি। প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পিতভাবে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

‎তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছে মন্ত্রণালয়

‎মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সায়মন ওভারসীজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহ–এর কাছে ক্রস বর্ডারে টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত সোমবার পাঠানো সেই চিঠিতে তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত উত্তর দিতে বলা হয়েছে।

 

‎আসফিয়া জান্নাত সালেহের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত সায়মন ওভারসীজ বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)–এর জিডিএস আইডি ব্যবহার করে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মোট ১,৮৯৪টি এয়ার টিকিট বিক্রি করেছে। এসব টিকিটের আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ১৬ কোটি টাকা। যাত্রীরা ওই দেশগুলো থেকেই মূল্য পরিশোধ করলেও সেই টাকা বাংলাদেশে ফেরত আসেনি বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

‎ট্রাভেল এজেন্টদের মতে, এভাবেই অর্থ পাচার হয়েছে

‎ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত ট্রাভেল এজেন্টদের নিজস্ব জিডিএস আইডি থাকে, যা বাংলাদেশ থেকেই পরিচালনা করতে হয়। এই আইডির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি হলে আইএটিএর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকে অর্থ প্রদান করতে হয়, এবং সেই অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশের রিজার্ভে যুক্ত হয়ে থাকে।

‎কিন্তু সায়মন ওভারসীজ নিজের জিডিএস আইডি বিদেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কাছে ব্যবহার করতে দেয়। ফলে টিকিট বিদেশে বিক্রি হলেও টাকার প্রবাহ বাংলাদেশে ফিরে আসেনি। এই পদ্ধতিতেই প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পাচারে জড়িয়ে পড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।

‎আসফিয়া জান্নাতের বিরুদ্ধে অতীতে অনিয়মের অভিযোগ

‎তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রাভেল এজেন্টদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)–এর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আসফিয়া জান্নাত সালেহ। সেই পদ ব্যবহার করে তিনি নানামুখী অনিয়মে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠনের সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের আগস্টে আটাব কমিটি বাতিল করে মন্ত্রণালয়। কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর থেকেই আসফিয়া জান্নাতের বিরুদ্ধে এয়ার টিকিট কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ সামনে আসে।

‎তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়, সায়মন ওভারসীজ লিমিটেডের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দ্রুততার সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাবের নতুন নেতৃত্ব এই ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

‎বিমান পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের কেলেঙ্কারি রোধে প্রযুক্তিগত নজরদারি এবং নিয়মিত অডিট অত্যন্ত জরুরি। তারা পরামর্শ দেন যে, আন্তর্জাতিক মানের একটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত, যা এ ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

‎এদিকে, এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সায়মন ওভারসীজ লিমিটেডের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সহযোগিতা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।

 

 

 

 

‎তথ্যসহায়তাঃযায়যায়দিন