১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আদালতের কড়া অবস্থান: তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:৩৬:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • / ১৯৫ বার পড়া হয়েছে।

‎সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় ১৩ বছর বয়সী শিশু কামিল আলীর উপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

‎বেতন চাওয়ায় শিশুটিকে আটকে রেখে বর্বর নির্যাতনের অভিযোগে আদালত কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন।

‎ঘটনাটি ঘটে ছাতক পৌরসভার হাসনাবাদ এলাকায়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ব্যবসায়ী রমিজ আলীর আড়তে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত শিশু মোঃ কামিল আলী তার ছয় হাজার টাকা পাওনা বেতন চাইলে, রমিজ আলী ও তার দুই ছেলে মোস্তাকিন ও মোকতাদির ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা শিশুটিকে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আড়তের ভেতরে আটকে রেখে প্যান্টের বেল্ট, জালি বেত, ঝাড়ু এবং প্লায়ার্স দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন।

‎এমনকি নির্যাতনের সময় শিশুটির কান প্লায়ার্স দিয়ে টানা, চোখে ঘুষি মারা, পিঠ ও ঘাড়ে আঘাত, এবং শেষে তিনতলা থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। পরে চুরির অভিযোগ এনে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ওই শিশুর বিরুদ্ধে আনীত চুরির অভিযোগের কোনো প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।

‎শিশুটির শরীরে চোখ, কান, ঘাড়, পিঠ, হাতসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা আদালতের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

‎ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় সুনামগঞ্জ শিশু আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ হাবিবুল্লাহ্ শিশুটিকে জামিনে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, তাকে তার আইনজীবী ও অভিভাবকের জিম্মায় ২০০০ টাকার বন্ডে জামিনে মুক্ত করা হয় এবং সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার জন্য প্রবেশন অফিসারকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

‎একই সঙ্গে ছাতক সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ককেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

‎এদিকে, এমন নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় ছাতক ও আশপাশের এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এত ভয়াবহ নির্যাতনের পরও কিভাবে পুলিশ শুরুতে নির্যাতনের শিকার শিশুটির বিরুদ্ধেই মামলা নিতে পারে?

‎ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ গণমাধ্যমকে জানান, “আমরা মামলা নিয়েছি, তদন্ত চলছে।” তবে স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ শুরু থেকেই নির্যাতিত শিশুকে আসামি বানিয়ে ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

‎সচেতন মহল মনে করছেন, এই ঘটনা যেন বিচারের বৃত্তেই আটকে না থাকে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আদালতের কড়া অবস্থান: তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ

আপডেট সময়ঃ ০৬:৩৬:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

‎সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় ১৩ বছর বয়সী শিশু কামিল আলীর উপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ও জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

‎বেতন চাওয়ায় শিশুটিকে আটকে রেখে বর্বর নির্যাতনের অভিযোগে আদালত কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন।

‎ঘটনাটি ঘটে ছাতক পৌরসভার হাসনাবাদ এলাকায়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ব্যবসায়ী রমিজ আলীর আড়তে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত শিশু মোঃ কামিল আলী তার ছয় হাজার টাকা পাওনা বেতন চাইলে, রমিজ আলী ও তার দুই ছেলে মোস্তাকিন ও মোকতাদির ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা শিশুটিকে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আড়তের ভেতরে আটকে রেখে প্যান্টের বেল্ট, জালি বেত, ঝাড়ু এবং প্লায়ার্স দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন।

‎এমনকি নির্যাতনের সময় শিশুটির কান প্লায়ার্স দিয়ে টানা, চোখে ঘুষি মারা, পিঠ ও ঘাড়ে আঘাত, এবং শেষে তিনতলা থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। পরে চুরির অভিযোগ এনে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ওই শিশুর বিরুদ্ধে আনীত চুরির অভিযোগের কোনো প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।

‎শিশুটির শরীরে চোখ, কান, ঘাড়, পিঠ, হাতসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা আদালতের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

‎ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় সুনামগঞ্জ শিশু আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোঃ হাবিবুল্লাহ্ শিশুটিকে জামিনে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, তাকে তার আইনজীবী ও অভিভাবকের জিম্মায় ২০০০ টাকার বন্ডে জামিনে মুক্ত করা হয় এবং সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার জন্য প্রবেশন অফিসারকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

‎একই সঙ্গে ছাতক সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ককেও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

‎এদিকে, এমন নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় ছাতক ও আশপাশের এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—এত ভয়াবহ নির্যাতনের পরও কিভাবে পুলিশ শুরুতে নির্যাতনের শিকার শিশুটির বিরুদ্ধেই মামলা নিতে পারে?

‎ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ গণমাধ্যমকে জানান, “আমরা মামলা নিয়েছি, তদন্ত চলছে।” তবে স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশ শুরু থেকেই নির্যাতিত শিশুকে আসামি বানিয়ে ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

‎সচেতন মহল মনে করছেন, এই ঘটনা যেন বিচারের বৃত্তেই আটকে না থাকে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে।