১ জনকে ৫৪ বছর ধরে পূজা করা হয়েছে: নাহিদ ইসলাম

- আপডেট সময়ঃ ১০:৫৪:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫
- / ৬ বার পড়া হয়েছে।
ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার টাঙ্গাইলে পদযাত্রা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই কর্মসূচিকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এপিবিএন পুলিশসহ নয় শতাধিক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তায় কাজ করেছেন বলে জানান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি’র) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গত কয়েকদিন ধরে রংপুরের একটি উপজেলায় হিন্দুদের বাড়ি ঘরে হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের নবীজিকে সেখানে কটূক্তি করা হয়েছে। আমরা এর অবশ্যই বিচার চাই। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই সভ্যতার উপর কেউ আঘাত করে, এমন ঘটনা আমরা কখনই মেনে নিবো না। অন্য ধর্মের উপর আঘাত করা আমাদের নবীজি শিক্ষা দেয়নি। নবীজি সব সময়ই অন্য ধর্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন। এই ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় নয় রাজনৈতিক, তাদের উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক এবং তাদের উদ্দেশ্যে হচ্ছে লুটপাট করা।
রংপুরে যারা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের অব্যশ্যেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যিনি ধর্ম অবমাননা করেছেন তাকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই।
দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে পদযাত্রা শেষে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, মওলানা ভাসানী শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈকিত পুরুষ ছিলেন। ভাসানীর রাজনীতি শুরু হয়েছিলো আসামে। সেই আসামে বাঙ্গালী মুসলমানদের কৃষকদের ভূমির অধিকার এবং কৃষকদের জন্য লড়াই করেছিলেন। সে লড়াই এখন পর্যন্ত আসামে চলমান রয়েছে। মওলানা ভাসানী প্রথম ব্যক্তি যিনি পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীদের বিদায় ঘোষণা করেছিলেন কাগমারী সম্মেলনের মাধ্যমে। তিনি একাই বৃটিশ ঔপনিবেশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। মওলানা ভাসানী দিল্লির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।
মওলানা ভাসানীকে ইতিহাসে স্মরণ করা হয় না। তিনি বলেন, যারা এই বাংলাদেশের স্থপতি তাদেরকে বাদ দিয়েই জাতির পিতা একজনকে ঘোষণা করা হয়েছে। একজনকে গত ৫৪ বছর ধরে পূজা করা হয়েছে। কিন্তু মওলানা ভাসানী না থাকলে শেখ মুজিব তৈরি হতো না। বাংলাদেশে শুধু একজন জাতির পিতা নন, কয়েকজন জাতির পিতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম রয়েছে মওলানা ভাসানী। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই সেখানে কৃষকদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারবো।
টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের শাড়ি জিআই পণ্য নিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। টাঙ্গাইল শাড়ি নামে কিভাবে ভারতের জিআই পণ্য দিতে পারে। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব কখনোই ভারত নিতে পারে না। অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা তাঁত শিল্পকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। কৃষকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা কৃষকদের নতুন করে সংগঠিত করতে চাই। আমরা বাংলাদেশের খাদ্য সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে চাই। কারণ আমরা কি উৎপাদন করি, কিভাবে তা বন্টন হবে এবং কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে কি না? এর উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত। নদী ভাঙনে প্রতি বছরে বিভিন্ন মানুষ সর্বহারা হয়ে যায়। এই নদী ভাঙন আমাদের ঠেকাতে হবে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুথানে টাঙ্গাইল ৯ জন শহীদ হয়েছে। আমরা সে সকল শহীদদের ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডাক্তার তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আজাদ খান ভাসানী, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অলিক মৃ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য (অব:) মেজর সালাউদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম, জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান রাসেল প্রমুখ।
উল্লেখ্য, পদযাত্রায় অংশ নিতে সোমবার (২৮ জুলাই) রাতেই এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী টাঙ্গাইলে এসেছিলেন।
টাঙ্গাইলে এসে প্রথমে তারা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার জিয়ারত ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মাজার জিয়ারত শেষে ভাসানী দরবার হলে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং শহীদ পরিবারদের সাথে দেখা করেন তিনি।
সুত্র:মানবজমিন