আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস
- আপডেট সময়ঃ ০১:২৯:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ৭ বার পড়া হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস আজ। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল জাতি।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর দ্বিতীয়বারের মতো উদ্যাপন হতে যাচ্ছে বিজয় দিবস।
জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সহস্র্রাধিক মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন। আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তাদের এই ত্যাগের বিনিময়ে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সামনে রেখে আগামী বছর হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শুভ সূচনা হবে এমন আশা নিয়েই এবার উদ্যাপন হতে যাচ্ছে বিজয়ের বার্ষিকী। গত বছরের মতো এবারো মুক্ত পরিবেশে উদ্যাপন হচ্ছে বিজয় দিবস।
বিজয়ের এই দিবসে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ে ছাত্র-জনতা আবারো মুষ্টিবদ্ধ শপথ নেবে বিজয় দিবসে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনায় গড়ে তোলার যে স্বপ্ন ছিল বিগত সময়ে নানা কারণে তা পুরো অর্জিত হয়নি। রাজনৈতিক হানাহানি, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের কারণে মলিন হয়ে পড়েছিল বিজয়ের ক্যানভাস।
৫ই আগস্টের পর বৈষম্যমুক্ত নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে একগুচ্ছ সংস্কার পরিকল্পনা দিয়ে যাচ্ছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী ১২ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এবার অনেকটা নির্বাচনী আবহেই উদ্যাপন হবে বিজয় দিবস।
মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার মুহূর্তকে স্মরণ করে বিজয় দিবস উদ্যাপন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে প্রথমে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন এবং এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পৃথক বাণীতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
দিবসটি উপলক্ষে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হবে।
ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো ইতিমধ্যেই জাতীয় পতাকাসহ ব্যানার, ফেস্টুন এবং রঙিন পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।
মহান বিজয় দিবস দেশব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং করে বিশ্বরেকর্ড গড়ার আয়োজন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী সকাল ১১টা থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে পৃথকভাবে ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শন করবে। সেখানে একটি বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো আয়োজন করা হবে।
এ ছাড়াও ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষে সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবে। যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হবে।
এ ছাড়া দেশের অন্যান্য শহরেও সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা একই রকম ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শনী পরিচালিত হবে। এর পাশাপাশি, পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনী দেশব্যাপী ব্যান্ড শো আয়োজন করবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় ৩ দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করেছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ওপর আবৃত্তি, প্রবন্ধ রচনা এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং দিবসটি উদ্যাপনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবে।
আজ বিকাল ৩টা থেকে নগরীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
প্রেসিডেন্ট বিকালে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানাবেন। এ ছাড়াও মহানগর, জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এই উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত জাদুঘরগুলো প্রবেশ ফি ছাড়াই সারাদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, অন্যদিকে দেশের সকল বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা এবং পায়রা বন্দর, ঢাকা সদরঘাট, পাগলা এবং বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসি জেটিতে সকাল ৯টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডের জাহাজগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি, আহত প্রবীণদের সুস্থতা এবং দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।
এ ছাড়াও দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র, ডে-কেয়ার সেন্টার, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, শিশু পরিবার এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
বিজয় দিবসের উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুষ্ঠানটি বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ এবং দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হবে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বিজয়ের ইতিহাস তুলে ধরা হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান এবং তাদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য বিশেষ সভার আয়োজন করা হবে।
বিজয় দিবসের এই বিশেষ দিনটিতে দেশের মানুষ একত্রিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতি কামনা করে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হবে।
এই দিবসটি আমাদের জাতির গৌরবময় ইতিহাসের স্মারক এবং নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার একটি সুযোগ। দেশের সকল স্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে এই দিনটি উদ্যাপন করবে, যা আমাদের জাতীয় ঐক্য এবং সংহতির প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।
তথ্যসহায়তাঃমানবজমিন



















